Tuesday, August 22, 2023

 

শরৎপূর্ণিমার স্মৃতি।

আজ শারদ পূর্ণিমা কিন্তু আকাশে চাঁদ দেখা যাচ্ছে না। সকাল থেকে মেঘে ঢাকা আর এক নাগাড়ে বৃষ্টি হয়েই চলেছে। সন্ধ্যেবেলায় লোডশেডিং হয়ে গেল। আমার ইনভার্টারটা কাজ করছে না তাই অনেকদিন বাদে মোমবাতির আলো দেখতে পেলাম। বৃষ্টির সাথে সাথে হঠাৎ দেখি স্মৃতি থেকে টুপটুপ করে কয়েকটা মুহূর্ত ঝরে পড়ল। ওরা বাষ্প হয়ে আবার মেঘ হয়ে ভেসে চলে যায়, তার আগে অনুভূতি দিয়ে স্মৃতিগুলোকে ধরে ফেললাম আর এবার সাজিয়ে নেওয়া যাক কিছু শব্দ দিয়ে।

শরৎ পূর্ণিমার রাত বলতে তোমাদের হয়তো অনেক কিছুই মনে পড়বে। আমার শরৎ পূর্ণিমা বললে মনে পড়ে খুব অল্পবয়সি এক নববাহিত দম্পতি, বালিকা বধূ সিনেমা , দুধ সাদা নদীর চরে বসে আছে চারিদিক কাশ ফুলে ঢাকা। ছেলেটি গান গাইছে "বড়ে আচ্ছে লাগতে হেয় ধারতি ইয়ে নাদিয়া রায়না অর তুম।" ছেলেটা আজ উদাস কারণ বৌটি কাল সকালে বাপের বাড়ি চলে যাবে।" আকাশে মাঝির ভাটিয়ালি আর বেহালায় মন কেমন করা সুর ভেসে চলেছে। মাস্টার মশাই বেহালা বাজাচ্ছেন। মনে পড়ে যায় আমার স্মৃতির ভান্ডারে পড়ে থাকা কিছু মুহূর্ত।

অনেক অনেক বছর আগে ,প্রায় 40 বছর হয়ে গেল, কোজাগরি লক্ষ্মী পূজো হতো আমার ঠাকুমার বাড়িতে। ছোট্ট একতলা দু কামরার ঘর ,দরজার বাইরে একটা পাতকুয়া। পূর্ণিমা রাতে সামনে উঠতো চাঁদ ধবধবে জ্যোৎস্নায় ভরে যেতে চারিদিক। আমরা খুড়তুতো জ্যাঠতুতো ভাই-বোনেরা খেলে বেড়াতাম। সামনের বারান্দায় ছোট্ট লক্ষ্মী ঠাকুর। আমার সেজো কাকা বাবু নিজের হাতে সেই প্রতিমা গড়তেন। সামনে অসংখ্য প্রসাদ রাখা থাকত, বাড়িতে হাতে তৈরি নাড়ু তার মধ্যে অন্যতম অ্যাট্রাকশন। মোয়াগুলো বোধ হয় বাড়িতে তৈরি হতো। একদিকে বড়দের গল্পের আসর বসত। লোকজন আসছে যাচ্ছে প্রসাদ বিতরণ হচ্ছে। সে কত লোক আসতো, ওই ছোট্ট বাড়িতে। আতিথেয়তার কোন ত্রুটি ছিল না। পুজো শেষে আমার সেজ কাকা আর বাচ্চু কাকা মিলে খিচুড়ি বানাতেন। বারান্দায় বসে কলা পাতায় সেই খিচুড়ি খাওয়া হত। সাথে থাকতো বাঁধাকপির তরকারি আর কিছু ভাজা। সে দারুন স্বাদ আর কি মজা। সেই চির পরিচিত হাপুস হুপুস শব্দ আর চারিদিক নিস্তব্ধ। বাড়িতে লণ্ঠন বা গ্যাস বাতির লাইট জ্বলছে।আশেপাশের বাড়িগুলো থেকে মাঝেমধ্যেই লক্ষ্মীপূজোর শাখের আওয়াজ ভেসে আসছে। দৃশ্যটা চোখের সামনে আমার আজও জ্বলজ্বল করে। আমার কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর স্মৃতি বলতে এটাই রয়ে গেছে। সামনে একটা পাঁচিল দেয়া বাড়ি ছিল যেখানে এখন একটা স্কুলহয়েছে। কিন্তু এক সময় সেখানে একটা হসপিটাল হবার কথা ছিল যেটা হয়ে ওঠেনি। একজন কেয়ারটেকার ছিল। নামটা আর মনে নেই কিন্তু মুখটা মনে আছে। অন্ধকারে বাড়িটা দাঁড়িয়ে থাকতো আর ঠিক তার মাথার উপর চাঁদটা দেখা যেত। সেই অন্ধকার একতলা কম্পাউন্ডে বাড়িটার দিকে তাকালেই মনে হতো ছাদের উপর একটা সাদা লক্ষ্মী পেঁচা বসে আছে ঠিক যেমন আমার ঠাকুমার সাদা তাঁতের শাড়িটির রঙের।

কিছু কিছু এমন মুহূর্ত থাকে যেগুলো ভেসে চলে যায় তুলোর মত নরম জোৎসনায় হাত ধরে কোন এক রূপকথার রাজ্যে ।যেখানে এইরকম সব সুন্দর মুহূর্তগুলো জাদুঘর সংরক্ষিত করা থাকে। ঘুম পরীরা তোমার চোখে ঘুমের সাথে স্বপ্নে সেইসব সুন্দর মুহূর্তগুলো তোমাকে ঘুরিয়ে আনে, কিন্তু ম্যাজিক এর মত সকাল বেলায় তা ভ্যানিশ হয়ে যায়। তুমিও ভুলে যাও অনেক কিছু ।শুধু সকাল বেলায় জেগে মনের হয় একটা ভালো লাগা লেগে আছে ,কিছু যেন একটা পেয়েছিলে, অজনা দেশে চলে যাওয়া প্রিয় মানুষগুলোর সাথে আবার দেখা হয়েছিল হয়তো। স্বপ্নের কিছুটি মনে নেই শুধু ভালো লাগার রেশ হয়ে যায়। আর তার সাথে মনে না করতে পারার মন খারাপ টুকুও থাকে।

No comments:

Post a Comment