Tuesday, August 22, 2023

 

পুজোর স্মৃতি

মহালয়া এলেই পুরনো স্মৃতি গুলো মনের মধ্যে ভিড় করে আসে। সকাল সকাল ঘুম ভাঙাতো বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের চন্ডীপাঠ অদম্য উৎসাহ ছিল রেডিওতে মহালয়া শোনবার কোনভাবেই যেন মিস না হয়ে যায়। সকালবেলায় ঘরে ঝাঁট দেয়া হতো আর ধুপ জ্বালানো হতো তারপর দিনের আলো ফুটলে বাবা গঙ্গায় যেতে তর্পণ করতে। বাবা প্রত্যেক বছর একটা নতুন লুঙ্গি আর একটা নতুন গামছা পেতেন মায়ের কাছ থেকে। আমাদের জন্য আসতো মা কালী মিষ্টান্ন ভান্ডার থেকে সিঙ্গাড়া আর গরম গরম জিলিপি। সেদিন জলখাবার এটাই থাকতো সাথে ,একটু মুড়ি খাওয়া যেত। দুপুরে ভাল রান্না হত কারন সবার ছুটি। সমস্ত পরিবার একসাথে বসে খেতে পারতো। কি সুন্দর ছিল সেই সব দিনগুলো। পুজোর নতুন জামা গুলো গুনতে খুব ভালো লাগত। বেশিরভাগই ছিট কাপড়ের সালোয়ার কামিজ, ফ্রক, স্কার্ট আলতাফদাদা কি দিয়ে সেলানো। কিছু হয়ত রেডিমেড থাকতো একদম লেটেস্ট ফ্যাশন নিউ মার্কেট থেকে। মা কত অল্প টাকায় কি গুছিয়ে সবকিছু কিনে আনত। কোন জামাকাপড় সেসময় আলমারিতে পড়ে থাকত না। কখনো মনে হয়নি নতুন জামাকাপড় পড়তে ইচ্ছে করছে না। প্রাচুর্য ছিল না। কিন্তু সুখ ছিল। পুজো আসলেই নতুন আনন্দমেলা শুকতারা পড়ার সৌভাগ্য ছিল। বাবার সাথে হাত ধরে পুজোর প্যান্ডেল দুই বোনের ঘোরার মজা ছিল। অষ্টমীর দিন লুচি ছোলার ডাল আর আলু ফুলকপির তরকারি খাওয়ার লোভ ছিল। পাড়ার বাড়ির দুর্গাপুজোয় বারবার ছুটে যাওয়া, বন্ধুদের সাথে গল্প করার তাগিদ ছিল। আর ছিল পুজোর সেই সব কিশোর কুমার মান্না দে হেমন্ত মুখার্জির অসাধারণ গানগুলোর আবেগ। সন্ধ্যায় ঠাকুর দেখে বাড়ি ফিরে বাড়ির বারান্দায় বসে পুজো পরিক্রমা করতে বেরোনো অপরিচিত লোকের ভিড়ে চেনা মুখ খুঁজে নেয়ার উত্তেজনাও ছিল। সবকিছু কেমন দ্রুত বদলে গেল। দুর্গাপূজা আমার জীবন থেকে উঠে গেল , কাজে জয়েন করার পর। পুজোর দিন গুলোতে শুধু অফিস করে কাটাতাম দুজনে।তারপর চিত্তরঞ্জন পার্কে আসার পর আবার আমি নিজের মতো করে দুর্গাপূজায় ছেলে মেয়েদের আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করি। করোনা এসে সেই উৎসাহ টুকুও ছিনিয়ে নিয়ে গেছে সবার। আমার সন্তানদের দুর্গাপূজা নিয়ে উদ্দীপনা এখনো অনেক। আমি চেষ্টা করেছি আমার মনের মধ্যে যেই স্মৃতিগুলো আনন্দ দেয় বাচ্চাদের মধ্যে সেই স্মৃতিগুলো তৈরি করা। তাই পুজোর কটা দিন অবশ্যই ছুটি নিই সন্তানদের আর বন্ধুদের সাথে সময় কাটাবার জন্য। অনেকটা পরে এটা বুঝেছি সবকিছু একরকম কখনোই থাকেনা। কিন্তু উদ্দীপনার যেন শেষ না হয়। আমাদের সবসময় সুন্দর মধুর স্মৃতি বানাতে হয়। সুন্দর মুহূর্ত কিন্তু ভাগ্য দেয় না। প্রতিটি সুন্দর মুহূর্ত মানুষ বানায়। দুঃখ আসে চুপিসারে। অসুস্থতা শরীরে লেগেই থাকে। সুখ আমরা আহ্বান করি। আবার চিন্তাও আমরাই আহ্বান করি। চিন্তা , অসুস্থতা, অসুবিধার কি কখনো শেষ আছে? কেউ কি কখনো লক্ষ্য করেছ সুখের মুহূর্তগুলো কত ক্ষণ স্থায়ী। যারা আনন্দে থাকে লক্ষ্য করে দেখুন তারা কিন্তু দুশ্চিন্তা কম করে, আরও যদি তাদের জীবনের গভীরের যাও দেখবে তাদের জীবনে কিন্তু চিন্তার অনেক কারণ আছে। কিন্তু তারা নিরন্তর নিজেদের উৎসাহিত করে। মানুষ বয়স বাড়ার সাথে সাথে ভীষণ একা, ক্লান্ত আর অসহায় হয়ে পড়ে। তাই আজ যা আছে সেটাকে প্রতি মুহূর্ত উপভোগ করা দরকার। কিউ কি "আনে বালা কাল জানে ওয়ালা হ্যায় হো সাকে তো ইস মে জিন্দেগি বিতাদে পল এভি জানে ওয়ালা হ্যায় "" অউর ফির ,হর এক পালকো ঢুন্ডটা হরেক ফল চলা গেয়া।"

তাই দুঃখ মায়ের চরণে অর্পণ করে তার আশীর্বাদ চাই কি তিনি আমার সকল প্রিয় জন আর বন্ধুদের শক্তি দিন জীবনের তার দেয়া প্রত্যেকটি মুহূর্ত কেই অসাধারণ করে তোলার জন্য।

সবাইকে শারদীয়ার অগ্রিম শুভেচ্ছা জানালাম। সবাই সুস্থ থেকো, সাবধানে থেকো।🙏🙏🙏

 

 

 

No comments:

Post a Comment