Tuesday, August 22, 2023

 

ফেরা

উমা খুব বাস্তববাদী মেয়ে।  উমা বুদ্ধিমতী, দুটি লাইনের মধ্যের কথাটা সবসময় পড়ে নিতে পারে। সময়ের সাথে সাথে যদিও মনের কথা খুলে বলা শিখেছে সোশ্যাল মিডিয়া তে, কিন্তু  নিজের আবেগ গুলো কে খুব বেশি পাত্তা দেয় না।  সব দিক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে পছন্দ করে

 এভাবেই যে কত বছর কেটে গেল বিয়ের পর  উমা বুঝতেই পারিনি। ঘর , গৃহস্থি, চাকরি ইত্যাদি সামলাতে।

 অনেক সিদ্ধান্তের মধ্যে সে যেটা নিয়ে কোনদিন বিবেচনা করেনি ; সেটা হলো পুজোর সময় ঘরে ফেরা

সেই ১৯৯৪ সালে দুর্গা পূজার পর আর কালীপুজোর আগে দিল্লি এল প্রথমবার। ১৯৯৫ যখন দুর্গা পুজো এলো মা ফোন করে জিজ্ঞেস করল কিরে পুজোতে আসবি না, আসতে পারত, কিন্তু ভাবলো নতুন অফিস আছে, প্রেমিক /  বরকে ছেড়ে আসতে মন চায়নি।

পুজোর পর বাবা-মা এসেছিলেন দিল্লি। সবাই মিলে রাজস্থান  গেছিল। সুন্দর সব স্মৃতি। ফেরার সময় বাবাকে   কাঁদতে দেখেছিল। মা হয়তো কেঁদেছিল লুকিয়ে। ওদের ট্রেনে তুলে দিয়ে অনেক কষ্টে কান্না লুকিয়ে চুপচাপ টিকিট কেটে ঢুকে গিয়েছিল সিনেমা দেখতে ,দিলবালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে। মেয়েটি খুব শক্ত আর বাস্তববাদী। সবকিছু ভুলে থাকতে চায়।

 তারপর তো অনেক বছর হয়ে গেল সেই একবার এসেছিল, বাড়ীতে ১৯৯৮ তে তাও দুর্গা পূজা উপলক্ষে নয় অফিসের কোন একটা কাজে, পুজোতে থেকে গেছিল ভাগ্য ক্রমে।

এরপর মনে আছে অনেক সময় দুর্গাপূজা পর, কালীপুজোর সময় বা তার একটু আগে বাবা-মা দিল্লি আসতেন।  বোন আসতো। সবাই মিলে হৈচৈ করে আবার ঘুরতে যেত। ওর হাজবেন্ডে সাথে থাকতো। ভারতবর্ষের নানা জায়গায় ঘুরেছে। দিনগুলো খুব আনন্দের ছিল।

এরপর  কত বছর পেরিয়ে গেছে। পুজোর সময় দিল্লিতে অফিস করে কাটে। তারপর ছেলে মেয়ে এলো। ওদের মঙ্গল কামনা করে নবরাত্রির উপবাস রাখে নর্থ ইন্ডিয়ান tradition অনুযায়ী। অষ্টমীর দিন থাকে   কন্যা পুজো। আজকাল দিল্লিতে  সপ্তমী আর নবমীর অঞ্জলি দিয়ে থাকে কখনো। বোনের বিয়ে হয়ে গেছে ,বাবা মা বৃদ্ধ হয়ে গেছেন ,কেউ আর দিল্লিতে আসতে পারেন না। প্রায় ১৩ বছর কেটে গেছে ওদের আসার পর।

দুর্গা মায়ের পূজা করে উমা মন প্রাণ দিয়ে সকলের মঙ্গল চায়। পুজোতে আর কলকাতায় যাওয়া হয় না। ২৪ বছর যায় নি সে। সবাইকে দেখত  দৌড়ে দৌড়ে টিকিট কাটছে বাড়ি যাবার জন্য সে কোনদিন প্ল্যান করেনি। ওর বাঙালির এত সেন্টিমেন্ট একটু আদিখ্যেতাই লাগতো। সেজেগুজে সুন্দর শাড়ি পরে দিল্লির আভিজাত বাঙালিদের মতো পুজো ঘুরতে যাওয়া তে বিভীষণ আপত্তি উমার। পূজোর পর দিল্লি থেকে বেরিয়ে যেত একটু ঘুরতে ওই দুই-তিন দিনের জন্য।

ওর সময় নেই। মধ্যে কিছুদিন দিল্লিতে কিছু বন্ধু ছিল একটু হৈচৈ করে কেটে যেত পুজোর দিনগুলো।  মেয়ের নাচের ফাংশন থাকতো।এখন বাড়িতেই থাকে। কোন জামাকাপড় কেনে না নিজের জন্য। কিন্তু একটা অদ্ভুত ব্যাপার সবার জন্য অনেক জামা কাপড় কিনে আনে। ওর বন্ধুরাও ওকে রিটান গিফট দেয়। বেরোনো বলতে ওই অঞ্জলি দেয়। ছেলে মেয়েদের জোর করে বলে যা না ঘুরে আয় তোরা ।ওর কোন আগ্রহ নেই কোন উদ্দীপনা নেই। হয়তো খুব একা। হয়ত  ছোটবেলার স্মৃতিগুলোকে ওভার রাইট করতে দিতে চায়না নতুন স্মৃতি দিয়ে। দুর্গাপুজোর অষ্টমীর দিন ওর জন্মদিন। মা-বাবা তিথি টাকে মেনে চলতেন। তাই বড় সাধ করে ওর নাম দিয়েছিলেন উমা। দুর্গাপুজোর দিন নিজের হাতে লুচি বানিয়ে সবাইকে খাওয়াতো ক্লাস নাইন থেকে, উমা।

অন্য সময় কলকাতায় যেত। প্রধানত খ্রিস্ট মাসের সময় বা জানুয়ারিতে। ট্যাক্সি থেকে যখন নামত দেখত, বাবা দাঁড়িয়ে থাকতেন এক অধীর অপেক্ষা নিয়ে। যখন ট্যাক্সিতে বসে বিদায় নিত, বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতেন  মা আর চায়ের দোকানে বাবা। ট্যাক্সিতে   অসম্ভব শক্ত হয়ে যেত ওর চোয়াল। গলায় যেটা দলা পাকা তো সেটা চোখের কোনে আসতো না। আসলে পালিয়ে যেত প্রত্যেকবার নিজের সংসারি কর্তব্যের দোহাই দিয়ে নিজের মনকে বুঝিয়েছে সে। সে শিখেছে দোটানায় পড়তে নেই। মায়ের কর্তব্য সবচেয়ে আগে।

কলকাতায় না যাওয়ার পূজোতে অনেক লজিক ছিল ওর। ছুটি নেই, কলকাতায় বৃষ্টি  হয়, প্রচন্ড ভিড় কিছু তো দেখা যাবে না, নবরাত্রি পুজো আছে। উপোস থাকে অষ্টমী পর্যন্ত। পুজো ছেড়ে কি করে যায়!ওই সময় সবাই তার নিজস্ব ব্যস্ততা নিয়ে আছে,কেন ডিস্টার্ব করে। ওর যাওয়াটা হয়তো অবাঞ্চিতই হবে।

কালকে মাকে ফোন করেছিল। তিনি দু বছরের উপর শয্যাশায়ী একটা অ্যাক্সিডেন্টের পর। ১৫ দিন বাদে ফোন করল। আজকাল তার কাজের এত ব্যস্ততা চলছে আর নিজেরও শরীরের অবস্থা এত বেসামাল যে ফোনও করতে পারে না।

আজকাল মা বেশি কথা বলে না।

উমি: কেমন আছো

মা: ভালো আছি মা

উমা : কি করছো

মা:এই একটু টিভি দেখছি

মা: তোরা সবাই কেমন আছিস বাচ্চারা কেমন আছে। জামাই ভালো তো

উমা: হ্যাঁ মা সবাই ভালো।জলখাবার খেয়েছো?

মা: হ্যাঁ হ্যাঁ এইতো খেলাম

আমি: বোন রা

সবাই ভালো আছে তো ?

মা: হ্যাঁ সবাই ভালো আছে।

এইরূপ একটা দুটো টুকটাক প্রশ্ন উত্তর। যেমন রান্না পুজোয় শান্তি দি কি খাওয়ালো

উমা: আমার বাড়িতে গেস্ট  এসেছে

পরে আবার ফোন করছি।

মা: ঠিক আছে ঠিক আছে মা.

ফোনটা  কাটতে যাবে হঠাৎ ওর মা বলল পুজোতে আসবি?

উমা: কি করে আসি বল অফিস আছে তুমি জানো আমি তো সেই নবরাত্তির উপোস করি. পুজো করতে হবে তো ।নভেম্বরে চেষ্টা করব.

ফোনটা কেটে দিল

হঠাৎ  নিজের মধ্যে একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করল উমা, দেখল চোখ দিয়ে একটা তরল পদার্থ বেরিয়ে আসছে। একি সে কাঁদছে। কান্না থামাতে পারছেনা কেন?

মনে পড়লো একজন বৃদ্ধ মানুষের চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে থাকা তার অপেক্ষায়। আরেকজন বৃদ্ধ মানুষ , শ্বশুরমশাই তিনিও বসে থাকতেন তার বাড়ির সামনে  ওদের অপেক্ষায় কোন এক ছোট পাহাড়ি শহরে। দুটো মানুষ আজ চলে গেছেন কয়েক বছর হল। বাবা হয়ত দুর্গা পুজোয় অনেকবার স্বপ্ন দেখেছেন  নাতি-নাতনি নিয়ে ঠাকুর দেখাতে  যাচ্ছেন। ঠিক ছোটবেলায় যেভাবে তাদের দুই বোনের হাত ধরে যেতেন। মা হয়তো তার দুই মেয়েকে আর তার পুরো পরিবারকে একসাথে পেতে চাইত পুজোর সময়।

উমা জানেনা কিছুই জানে না কোন দিন তো জিজ্ঞেস করেনি। কোনোদিন তারা মুখ ফুটে  কিছু বলেন নি।

কি হলো জানিনা, উমা টিকিট কাটল অষ্টমীর রাতে কলকাতার জন্য। FM একটা গান ভেসে আসছে

ये जीवन दिल जानी

दरिया का है पानी

पानी तो बेह जाए

बाकी क्या रेह जाए

यादें, यादें, यादें

ये यादें किसी दिल--जानम के चले जाने के बाद आती है।

এবার হয়তো বাড়ি ফিরবে পুজোয়উমা।

ছবি: সংগৃহীত

জয়া সুদ

আশ্বিন,

২০২২

 

ভয়

আজ হ্যালোইন ডে তে ভাবছি একটা গল্প শোনানো যাক। গল্পটা ঠিক ভূতের না হয়েও একটু অদ্ভুত তো বটেই। আপাতত আমি নাম স্থান-কাল-পাত্র সব বদলে দিলাম। ধরা যাক গল্পটা কেউ আমাকে বলেছিল কোন এক সময়।

গল্পটার উৎস 90 এর দশকে।

শুভ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ে একটি শহরে। বাবা মা থাকেন কলকাতা তে।

মা-বাবার একমাত্র সন্তান বলে অনেক স্বপ্ন তাকে নিয়ে। শুভ বা শুভদীপের তখন কলেজের ফাইনাল ইয়ার চলছে। শীতের ছুটি সামনে। আর পরীক্ষা নিকটবর্তী। সেই সময় একসাথে শুভদীপের পরিবারে কিছু আত্মীয়র মৃত্যু ঘটে যদিও মৃত্যু গুলো সব স্বাভাবিক কিন্তু খুব দুঃখজনক। শুভর দিদিমা মারা যায়। এক জামাইবাবু মারা যায় আর শুভর ছোট কাকা মারা যায় হার্টফেল করে।

শুভর বাবারা পাঁচ ভাই আর দুই বোন শুভর বাবা আর এক কাকা চাকরিসূত্রে বাইরে থাকতেন , শুভ দুই জ্যাঠামশাই আর এই ছোট কাকা ওদের গ্রামের বাড়িতেই থাকতেন। পিসিরা সবাই বিবাহিত।

বাড়িটা বিশাল আর হুগলি জেলার এক গ্রামে ওদের অনেক জমি জায়গা আর আর কিছু দোকান ছিল। ওরা প্রায়ই গ্রামের বাড়িতে যেত আর শুভর ঠাকুরমা তখনও বেঁচে ছিলেন। সবাই ওদের খুব ভালোবাসতো বিশেষ করে এই কাকু কাকিমা ওর খুব প্রিয় ছিল

এই মৃত্যুর খবর শুভকে অনেকদিন জানানো হয়নি ওর পরীক্ষা চলছিল বলে। খবরটা শোনার পর শুভর মনটা খুব খারাপ ছিল। কাকুর মৃত্যুর পর হোস্টেলে এক রাতে একটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখলো ও।

দেখলো গ্রামের বাড়িতে গেছে। পৌঁছতে অনেক রাত হয়েছে। লাস্ট train এসেছে! খুব মেঘলা আকাশ , ষ্টেশনে নেমে একটা বাস পেল। যে রাস্তা দিয়ে গাঁয়ের বাড়ি যায় তার মোড়ে বাস টা নামিয়ে দিল আল ধরে লন্ঠন হাতে কে যেন আসছে চাদর মুড়ি দিয়ে মুখটা দেখা যাচ্ছে না, মনে হচ্ছে যেন ওকে নিতে এসেছে। সামনে আসতে শুভ মুখটা দেখতে পেল রঘুদা। যে রঘুদা অনেক বয়স পর্যন্ত ওদের গাঁয়ের বাড়ি ,ক্ষেত-খামারের কাজ, বাড়ি অন্যান্য নানা কাজ দেখাশোনা করে গেছেন। কিন্তু গত তিন বছর হলো তার মৃত্যু হয়েছে। স্বপ্নেও শুভর সেই কথাটা মনে পড়ল। ভয় পেয়ে বাড়ির দিকে দৌড়াতে লাগলো, এসে দেখল ঠাকুর মার বাড়িতে কারেন্ট নেই। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার ,হঠাৎ ঝড় বৃষ্টি পড়তে শুরু করল। বাড়িতে কি অন্য লোক নেই তবে? স্বপ্নে দেখল দোতলার একটা ঘরে আলো জ্বলছে ।মোমবাতি আর লন্ঠনের আলো। ঝড় বৃষ্টি , অন্ধকার রে দুতলা বাড়িটা দৈত্যের মতো দাঁড়িয়ে আছে। পুরনো জমিদার বাড়ির সামনে বাঁশ বাগান আর একটা মাঠ পেরিয়ে তবে একটা ছোট রাস্তা, শুধু সাইকেল যেতে পারে, আর দূরে টিমটিম করে কিছু আলো বাড়ির সামনে একটা পুকুর। পেছনে বেশ কিছুটা ঘন বাগান বা জঙ্গল। আর এদিক ওদিক কিছু বাড়ি হয়তো আছে। বোঝা যায় না কিন্তু সবচেয়ে বেশি বোঝা যায় সেটা জমাট বাঁধা অন্ধকার আর একটা ছমছমে নিস্তব্ধতা কোনো রকমে

সিঁড়ি দিয়ে দোতলার ঘরে যেতে দেখল, আলো আসছে ,ওর যে কাকা মারা গেছেন তাঁর ঘর থেকে। আর কাউকে দেখতে পেল না। কাকার ঘরে উঁকি দিয়ে দেখল , ছোট কাকু টেবিলে বসে কিছু , লিখেছেন।ও আসাতে ওর দিকে মুখ ঘোরালেন। ওর শিরদাঁড়া বেয়ে এক শিহরণ দৌড়ে গেল। ওর মনে পড়ল ছোটকাকা তো আর এই পৃথিবীতে নেই। ওর প্রচন্ড ভয় লাগতে শুরু করলো। দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করতেই দেখল একদম চলতে পারছে না! তারপর ওর ঘুম ভেঙে গেল দেখল ঘড়িতে তিনটে। হোস্টেলের বিছানায় শুয়ে আছে আর প্রচন্ড ঘেমে গেছে। শরীর কিছুটা অবশ। ভাবল এই অদ্ভুত স্বপ্ন কেন দেখলো! অস্বস্তিতে কিছুক্ষণ কাটলো আবার কখন ঘুমিয়ে পড়ল কে জানে।

পড়াশুনার চাপে আর ইন্টারভিউর জন্য কিছু চিঠি লেখালেখি করলেও শুভ গ্রামের বাড়িতে যেতে পারেনি। ফাইনাল পরীক্ষার পর বিভিন্ন কম্পিটিটিভ এক্সামের জন্য তৈরি হতে লাগলো।

এরমধ্যেই ঠিক করল একদিন গ্রামের বাড়ি যাবে

গ্রামের বাড়ি গেল প্রথমবার কাকার মৃত্যুর পর ঠাকুরমা, জ্যাঠামশাই দের কাকিমা আর ভাই বোনেদের সাথে দেখা করার জন্য। পৌঁছে গেল সকাল সকাল। সারাদিন ভালই কাটল ভেবেছিল রাতে থেকে যাবে। কিন্তু হঠাৎ মনে পড়ল কিছু ইম্পর্ট্যান্ট ফরম ফিলাপ বাকি রয়ে গেছে। সেই জন্য বিকেল বিকেল রওনা দিলো। আর সবাইকে বলল যে আবার আসবে 'দিন পর।

সবাই থেকে যেতে বলছিল কারণ আকাশের অবস্থা খুব ভাল নয়। বলল বৃষ্টি আসার আগে কলকাতা পৌঁছে যাবে। 5 টার ট্রেন ধরতে স্টেশনে এসে বসে রইল। কিন্তু টেন আর আসে না ,শোনা গেল সেদিন একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে রেললাইনে তাই সমস্ত ট্রেন বন্ধ ।কখন লাইন খুলবে কিছু বলা যায় না। এদিকে আকাশের অবস্থা প্রচন্ড সঙ্গীন। আবার গায়ের বাড়িতে ফেরা সমীচীন মনে করল। বাস ধরে ঠিকমতো নামল মোড়টায়। ততক্ষণে হালকা ঝড় উঠতে শুরু করেছে। দেখল কারেন্ট নেই আর ঝড় আসাতে কারেন্ট গেছে ,মানে সারারাত কারেন্ট আসবে না। মোড় থেকে বাড়ির রাস্তায় নেমে কিছুদূর যেতেই দেখল একজন লন্ঠন হাতে এগিয়ে আসছে। অন্ধকারে ঠিক বোঝা যাচ্ছেনা ।ওর হঠাৎ করে কিছু মাস আগে দেখা স্বপ্নটার কথা মনে পড়ল। নিজের অজান্তেই একটা ভয় শিরদাঁড়া দিয়ে দৌড়ে গেল। চারিদিক নিস্তব্ধ, দুপাশে খেত আর সরু রাস্তা। অন্ধকারে মোড়া চেহরাটা ওর কাছে এসে দাঁড়ালো, ভয়ে তাকিয়ে দেখল অচেনা এক মানুষ রঘুদা নয় লোকটি পাশ কাটিয়ে চলে গেল। গায়ের বাড়ির সামনে গিয়ে দেখে একদম স্বপ্নের দৃশ্যটার মত দৈত্যকায় বাড়িটা অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছে। কোথাও কোন লাইট নেই শুধু অন্ধকারে কিছু ক্ষীণ আলোর রেখা। দরজা গুলো খোলা ছিল। একতলায় রান্নার ঘরে রান্না হচ্ছে বোধহয়। দোতলায় উঠে দেখল সবাই যে যার ঘরে। ওকে ফিরে আসতে দেখে সবাই বলল , ঠিক করছে ফিরে এসে, ঝড় বৃষ্টি ভালো চলছে বাইরে।

রাত্রিবেলা খাওয়ার পর ওকে শুতে দেয়া হলো ছোট কাকার ঘরে, সাথে ছোট কাকার ছেলে আর নিচের বিছানায় ছোট কাকিমা আর কাকিমার মেয়ে। ওর ওই ঘরটিতে থাকার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু কারণ কি বলবে একটা স্বপ্ন? একটি অজানা ভয়?

ঘরে বড় বড় জানালা। আলো-আঁধারিতে বোঝা যাচ্ছে পেছনের জঙ্গলে গাছের পাতাগুলো দুলছে আর তাদের ছায়ারা ঘরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাইরে এখনও অল্প ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে।গরম নেই আজ, তবু ঘুম আসতে চাইছিল না। কিরকম এক অশরীরী অশুভ অনুভূতি ! বাড়িটা কেমন যেন তাড়াতড়ি ঘুমিয়ে পড়ল কোন এক মরন কাঠির ছোঁয়ায়। নিঝুম অন্ধকারে অদ্ভুত ভয় আবার ওকে গ্রাস করতে থাকে। আর বারবার ওর নিজের দেখা স্বপ্নটা ফিরে আসতে থাকে ওর মনের মধ্যে। এর মধ্যে বোধহয় কখন চোখের পাতা বন্ধ হয়ে গেছিল। মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল, বেশ সচেতন ছিল , জানত কোথায় শুয়ে আছে। ঘুম ভাঙলেও চোখ খোলবার সাহস হল না। কারন শুনল ঘড়িতে তিনটে বাজার শব্দ হলো। শুভ যেন ঠিক জানতো যদি চোখ খোলে ,দেখতে পাবে সামনের টেবিলটাতে আলো জ্বলছে লন্ঠনের আর ছোট কাকা ওখানে বসে কিছু লিখছে। চোখ খুললেই ছোট কাকার সাথে চোখাচোখি হবে। কিন্তু শুভ জানে ওর ছোট কাকা আর এই পৃথিবীতে নেই ! তারপর

সারা রাত ঘুম না এলেও ,ভোরের আলো ফোটার আগে , ঘড়িতে পাঁচটা বাজার ঘন্টা না শোনা পর্যন্ত শুভ চোখ কিন্তু খোলেনি।

সেই রাতে ভয় পাওয়া আজ শুভর মনে আছে।

সত্যি ঘটনা অবলম্বনে।

জয়া সুদ